Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

নতুন রপ্তানি সম্ভাবনার ফসল কাজুবাদাম

নতুন রপ্তানি সম্ভাবনার ফসল কাজুবাদাম

কৃষিবিদ ড. শামীম আহমেদ

সনাতন কৃষি থেকে বের হয়ে আধুনিক কৃষির সাম্রাজ্যে প্রবেশের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেমন সদা সচেষ্ট বর্তমান  কৃষিকে ধরে রেখে আগামীর কৃষি যেন খোরপোশের কৃষি থেকে বাণিজ্যিক কৃষিতে পরিণত হয় সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করছেন। পাশাপাশি কৃষি মন্ত্রণালয়ের সুযোগ্য কৃষিমন্ত্রী দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে কৃষককে নিয়ে ভাবছেন বাণিজ্যিকীকরণের ক্ষেত্রে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের যুগোপযোগী নীতির কারণে বাংলাদেশের কৃষি আজ বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য একটি রোল মডেল হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। কৃষির সকল সেক্টরেই আমাদের সফলতা অভাবনীয়। মাঠ ফসল বিশেষ করে দানা জাতীয় শস্য উৎপাদনে আমরা বিগত কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে সাফল্য অর্জন করে আসছি। এ অর্জন ধরে রাখার পাশাপাশি আমাদের এখন নজর দিতে হবে উদ্যান ফসল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে। বর্তমানে সরকার তথা কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও মাঠপর্যায়ে চাষিদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে তাও অর্জন হবে।


বাংলাদেশে কাজুবাদামের চাষ সম্ভাবনা
বাণিজ্যিক কৃষির যে সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে সেই বাণিজ্যিকীকরণের বাহক হিসেবে কাজুবাদাম এর সম্ভাবনা ব্যাপক। প্রাথমিক অবস্থায় কাজুবাদাম গাছ পাহাড়ি অঞ্চলে কৃষি পুনর্বাসন কার্যক্রমের সাথে ভূমিক্ষয়, ভূমিধস ইত্যাদির জন্য লাগানো হলেও বর্তমানে এই গাছটি দ্রুত বর্ধনশীল, পরিবেশবান্ধব এবং লাভজনক হওয়ায় পাহাড়ি/সমতল জমির পতিত জায়গায় রোপণের কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। কাজুবাদাম একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল। বাংলাদেশের সর্বত্র এর চাষ সম্ভব। কাজুবাদামকে বলা হয় প্রাকৃতিক পুষ্টিকর ফল। এর ২টি অংশ খাওয়ার উপযোগী। কাজু অর্থাৎ আপেল অত্যন্ত রসালো এবং বাদাম পুষ্টিকর খাবার। পাকা কাজু আপেল সাধারণ আপেলের মতো খাওয়া যায়। কিন্তু বাদাম কাঁচা  অবস্থায় খাওয়ার উপযোগী নয়। প্রক্রিয়াজাত করার পর বাদাম খাওয়া হয়। ইহার বীজ থেকে পাওয়া বাদাম সুস্বাদু, মুখরোচক ও পুষ্টিকর এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়েও মূল্যবান। বাদামের খোলসের তেল শিল্প কাজে ব্যবহৃত মূল্যবান দ্রব্য। তাছাড়া বাদামের উপরের অংশে ফল থেকে জুস, ভিনিগার এবং অ্যালকোহল তৈরি করা যায়। আমাদের দেশের জলবায়ু কাজুবাদাম চাষের বেশ সহায়ক।


আন্তর্জাতিক বাজারে কাজুবাদামের চাহিদা
আন্তর্জাতিক বাজারে কাজুবাদামের চাহিদা প্রচুর রয়েছে এবং এই চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে। বৈশ্বিক ৩৫ লাখ টন উৎপাদিত কাজুবাদামের মধ্যে যেখানে আফ্রিকার দেশগুলোতে প্রায় ১২ লাখ টন, ভারতে ৭ লাখ ৪৬ হাজার টন, ভিয়েতমানে ৪ লাখ টনের মতো কাজুবাদাম উৎপাদিত হয়, সেখানে বাংলাদেশে উৎপাদন মাত্র ১ হাজার টন। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে কাজুবাদামের আমদানি ২০১৪-১৫ সালে ছিল ১৮, ০০০ কেজি যা ২০১৮-১৯ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫,৮০,০০০ কেজি (সূত্র:এনবিআর)। অভ্যন্তরীণ এই ব্যাপক চাহিদা মিটিয়েও কাজুবাদাম রপ্তানি করে ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।  


বাংলাদেশে কাজুবাদামের চাষাবাদ এলাকা
পার্বত্য এলাকায় আবাদযোগ্য মাঠ ফসলি জমি আছে মাত্র মোট জমির ৫ শতাংশ। সমতল জমির অভাবে এখানে মাঠ ফসলের আবাদ সম্প্রসারণের সুযোগ খুবই সীমিত। অন্যদিকে, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে কৃষকগণ তাদের খাদ্যের চাহিদা মিটাতে পাহাড়ের ঢালে অপরিকল্পিতভাবে চাষাবাদ করে থাকেন। এর ফলে একদিকে যেমন ভূমি ক্ষয় এবং ভূমির উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায় অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্যও নষ্ট হয়। আজ থেকে প্রায় ৩০-৩৫ বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এবং উদ্যান উন্নয়ন বিভাগ (কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ) সমন্বয়ে পার্বত্য এলাকায় কৃষি উন্নয়নের জন্য প্রচুর পরিমাণে অন্যান্য ফলের চারা/কলমের সাথে কাজুবাদামের চারা সরবরাহ করে থাকে। কালের চক্রে কাজুবাদাম গাছ বড় হয়ে ফল দিতে থাকে। কিন্তু কাজু বাদামের বিক্রি, বাজারজাত করা বা প্রক্রিয়াজাত করার কোন প্রকার ব্যবস্থা তেমন ছিল না। শুধু রাঙ্গামাটিতে দেশীয় পদ্ধতিতে স্বল্প কিছু কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত করা হতো। তবে বিপুল পরিমাণ কাজুবাদাম অবিক্রীত থেকেই যেত। লোকসান বিধায়  কাজু বাদামের প্রতি কৃষকগণ অনীহা প্রকাশ করে এবং অনেকে  প্রতিষ্ঠিত  বাগানের গাছ কেটে ফেলে। পরবর্তীতে কিছু রপ্তানিকারক ভারত, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে স্বল্প পরিমাণে কাজু বাদাম রপ্তানি করতে থাকে। বর্তমানে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এবং নীলফামারীতে ব্যক্তি উদ্যোগে দুটি কাজুবাদামের প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।


কাজুবাদামের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
বৃক্ষজাতীয় ফলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কাজু বাদামের স্থান তৃতীয়। আর বাদামজাতীয় ফসলে কাজুবাদাম, প্রথম স্থানে। আমাদের দেশে এক কেজি প্রক্রিয়াজাত করা প্যাকেটকৃত বাদামের মূল্য প্রায় ১০০০/- ১২০০/- টাকা। সাধারণ  কৃষকগণ প্রক্রিয়াজাত করতে না পারলেও শুধু বাদাম বিক্রি করে টন প্রতি প্রায় ৬০,০০০/- থেকে ১,০০০০০/- টাকা পেয়ে থাকেন। তবে এর বাজার বেশ পরিবর্তনশীল। বিশ্বে শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ ভিয়েতনাম ২০১৯ সালে ৩.৬ বিলিয়ন ডলারের মতো কাজুবাদাম রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশ ২০১৯-২০ সালে ভিয়েতনামে ও ভারতে কাঁচা কাজুবাদাম যেখানে রপ্তানি করেছে মাত্র ৩.৫৭ লাখ ডলারের, সেখানে প্রস্তুত বাদাম আমদানিই করেছে ভিয়েতমান থেকে ৮৫৭ টন। ২০২০ সালের উৎপাদন হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে কাজু বাদামের ফলন প্রতি হেক্টরে ১.৩২৩ টন (সূত্র: প্রথম আলো, ১৫ আগষ্ট,২০২০)।  


পাহাড়ি অঞ্চলে কাজু বাদামের উন্নয়ন সম্ভাবনা
কাজুবাদাম চাষের উপযুক্ত আবহাওয়া ২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে ২৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা, ১০০০মিমি থেকে ২০০০ মিমি বার্ষিক বৃষ্টিপাত, ৫০০মিটার থেকে-১০০০ মিটার সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা এবং বন্যা মুক্ত অম্লীয় বালি বা বালি দোআঁশ মাটি। এসব বিষয়গুলো বিবেচনা করলে কাজুবাদাম চাষের উপযুক্ত জমি পাহাড়ি অঞ্চলের প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় নভেম্বর থেকে প্রায় এপ্রিল/মে মাস পর্যন্ত সাধারণত কোন বৃষ্টিপাত হয় না। অর্থ্যাৎ ৫/৬ মাস পাহাড়ি ভূমি বৃষ্টি বিহীন অবস্থায় থাকে। আবার সেখানে সেচ দেওয়ার তেমন কোন সুযোগ সুবিধা নেই। মার্চ এপ্রিল মাসে প্রচণ্ড খরা এবং গরম হাওয়া বিদ্যমান থাকে। সে অবস্থায়ও কাজুবাদাম বেশ ভাল ফলন দিয়ে থাকে। আবার স্বল্প মূল্যের জমি এবং কর্মঠ শ্রমিক প্রাপ্যতা এখানে রয়েছে। জমি হল কৃষির মূল উপাদান, ইহা ছাড়া কৃষি অচল ও অসম্ভব। সমতল এলাকায় কাজুবাদাম করার মতো স্বল্পমূল্যের ভ‚মি পাওয়াটা দুষ্কর। বান্দরবনে ১,৭৯৭ হেক্টর জমিতে ৮.৬৯ লাখ কাজুবাদামের গাছ রয়েছে। বান্দরবনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফলন থানচি উপজেলায়, মোট আবাদের ৫০ শতাংশই হয় এই উপজেলায়। এরপর রুমা, রোয়াংছড়ি এবং সদরে কাজুবাদামের চাষ হয়।

 
কর্মসংস্থানের সুযোগ
কাজুবাদাম উৎপাদন সংগ্রহ, শুকানো ও সংরক্ষণ কাজে প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে কাজুবাদামের ফল থেকে কাজুবাদাম সংগ্রহের সময় অবশ্যই শ্রমিকের মাধ্যমে সমাধান করতে হয়। তাছাড়া আধুনিক মেশিনে প্রক্রিয়া জাত করা হলেও সেখানে পিলিং ও গ্রেডিং ইত্যাদি কাজে শ্রমিকের  প্রয়োজন হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, কাজুবাদামের উৎপাদন শিল্পের সাথে জড়িত প্রায় ৯০ ভাগ শ্রমিকই নারী। তাই এই শিল্পকে নারীবান্ধব বিশেষ করে অবহেলিত নারীর কর্মসংস্থানের বিরাট সুযোগ রয়েছে। দৈনিক ৪ (চার) টন কাজুবাদাম প্রক্রিয়া জাত হয় এমন ফ্যাক্টরিতে  দৈনিক প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। ২০১৬ সালে কাজুবাদামের কারখানা যেখানে ছিলো মাত্র একটি, এখন সেখানে কারখানার সংখ্যা বেড়ে ২টি হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা তো রয়েছেনই। গত বছর হতে ফলন ও কারখানা গড়ে তুলতে কাজ শুরু করেছেন দেশের ইস্পাত খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম গ্রুপ।  


কাজুবাদামের জাত পরিচিতি
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রাচীণ জাতের কাজুবাদাম চাষ হয়ে থাকে। এই জাতের কাজুবাদামের ফলন কম এবং দেরিতে ফলন পাওয়া যায়। ইদানীং ভারত ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কায় কিছু কিছু উন্নত জাত আবিষ্কার হয়েছে, যেগুলোতে ফলন ৪/৫ গুণ বেশি এবং ছোট ছোট গাছে প্রচুর ফলন দেয়। বছরব্যাপী ফল উৎপাদন ও পুষ্টি প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত ও ভিয়েতনাম হতে উন্নত নতুন জাতের VLA--৪, ভাস্করা, OP-০৯ চারা কলম এনে দেশের বিভিন্ন হর্টিকালচার সেন্টারে মাতৃগাছ তৈরি করার কাজ চলমান আছে।


অর্গানিক কাজুবাদাম চাষের গুরুত্ব
ইদানীং দেখা যায়, আগের তুলনায় মারাত্মক রোগ যেমন- ক্যানন্সার, ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ, ব্লাড প্রেসার, কিডনি, লিভারসহ শারীরিক সমস্যা অনেক বেশি দেখা যায়। বিশেষজ্ঞের মতে এগুলোর অনেক কারণ থাকলেও বিভিন্ন ধরনের রাসায়নি দ্রব্যসহ বালাইনাশকের অপব্যবহার একটি প্রধান কারণ। আমরা কৃষি পণ্য উৎপাদন করতে কৃত্রিম রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার যত কমাতে পারব ততই মানব স্বাস্থ্য রক্ষায় উপকার হবে। বিগত কয়েকদিন আগে মন্ত্রী পরিষদ সভায় বাংলাদেশে জৈব কৃষিনীতি অনুমোদন করেছে। আমরা অন্যান্য ফল ফসলের মতো কাজুবাদাম উৎপাদনে  জৈব কৃষি নীতি পালন করে , এদেশে এবং আন্তর্জাতিক বাজারেও ভালো দামে বিক্রির সুযোগ পাবো। আর আন্তর্জাতিক বাজারে অর্গানিক ফসলের চাহিদাতো দিন দিন বাড়ছেই।


উদ্যান ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবেলা, পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য গুণগতমান সম্পন্ন ও নিরাপদ খাদ্য চাহিদা পূরণ, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরিত করতে কৃষি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারসহ কৃষিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণের ফলে কাক্সিক্ষত কৃষি প্রবৃদ্ধি অর্জন ত্বরান্বিত হবে, মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ বাড়বে তথা দেশের সামগ্রিক ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

অতিরিক্ত উপপরিচালক, হর্টিকালচার উইং, ডিএই, মোবাইল : ০১৭১১১৭৪৩৪৫, ই-মেইল : addtvs@dae.gov.bd


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon